সমস্ত লেখাগুলি

রাজা রামমোহন রায় -
রাজু দত্ত
May 20, 2025 | জীবনী | views:5 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ড. বিপান চন্দ্র বলেছেন, “Rammohan Roy was the brightest star in the Indian sky dring the first half of the 19th century.” (মডার্ণ ইন্ডিয়া, পৃষ্ঠা - ১২৮) 


সত্যিই তাই, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায় ছিলেন ঊনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। এটা ঠিক যে তিনি ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত চেতনার অধিকারী নন, কিন্তু তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি নির্ভয় ধর্মীয় কুসংস্কার, পৌত্তলিকতা, আচার-অনুষ্ঠান সর্বস্বতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ভাবজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর কাজেও সেই ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। 

   

কে জানত সম্ভ্রান্ত নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ রামকান্ত রায়ের মধ্যম পত্নী তারিণীর কণিষ্ঠ পুত্রটি ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত হয়ে উঠবেন! পূর্বপুরুষ কৃষ্ণকান্ত ছিলেন রাজকর্মচারী। সেই সূত্রে তাঁদের পদবী রায় হয়। পনেরো-ষোলো বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। তাঁর এই গৃহত্যাগের পিছনে ছিল নিষ্ঠাবান পিতার সাথে ধর্মীয় রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্ব। 


তিনি নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার নামে জনৈক সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতের কাছে সংস্কৃত শেখেন।‌ এছাড়া তিনি ইংরেজি, গ্রীক, ফরাসি, আরবি, হিব্রু প্রভৃতি ভাষাতেও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।‌ ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন ডিগবির সাথে পরিচিতির সুবাদে তিনি দেওয়ান পদে কর্মরত হন। কর্মসূত্রে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। ইংরেজি ভাষায়ও বিশেষ‌ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় চলে আসেন।‌ এইবার শুরু হল তাঁর প্রকৃত লড়াই।


কলকাতার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্ন কুমার ঠাকুর, রাজচন্দ্র দাস, রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে রামমোহনের। এইসকল ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলেন আত্মীয় সভা (১৮১৫)। একেশ্বরবাদের প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা গড়ে তুললেন, যা দুবছর পর ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়। ব্রাহ্ম সমাজ যে ধর্মমতে বিশ্বাস করতে শুরু করে তা হল ব্রাহ্ম ধর্ম।‌ নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন‌ ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বীরা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণের সুযোগ ছিল। একেশ্বরবাদী ভাবধারা প্রসারে তিনি ফরাসি ভাষায় লেখেন তুয়াফৎ উল মুয়াহিদ্দিন গ্রন্থটি। এছাড়া ঈশ, কঠ,কেন, মন্ডুক,ও মান্ডুক্য নামক উপনিষদের অংশ বঙ্গানুবাদ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন বেদান্ত কলেজ।‌


 


ছেলেবেলায় দাদার মৃত্যুর পর মাতৃসমা প্রিয় বৌদিদির সহমরণে ব্যথিত রামমোহন প্রতিজ্ঞা করেন যে সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি লড়বেন। এই প্রথা তিনি বন্ধ করবেনই।‌ তিনি সাধ্যমত  বল ও যুক্তিপূর্ণ তর্ক দ্বারা সহমরণে বাধা দিতে থাকেন। 


সহমরণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি ‘প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। রক্ষণশীল সমাজ পাল্টা  ‘বিধায়ক ও নিষেধকের সম্বাদ’ রচনা করলে রামমোহন এই বিষয় আরও দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। এরপর তিনি দ্বারকানাথ-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি বড়োলাটের নিকট পেশ‌ করেন। পাল্টা  রক্ষণশীল সমাজ সহস্রাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষর সম্বলিত একটি প্রতিবাদ পত্র পেশ‌ করে। অবশেষে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেটিঙ্ক ১৭ নম্বর রেগুলেশন দ্বারা সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। রামমোহনের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি লেখা হয় ইতিহাসে। ছেলেবেলার প্রতিজ্ঞা পূরণ করলেন তিনি।


রামমোহন গৌড়ীয় ব্যাকরণ, বেদান্তগ্রন্থের মত বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেন।‌ বাংলায় ‘সম্বাদ কৌমুদী’ ও ফরাসি ভাষায় ‘ মীরাৎ-উল-আকবর ‘ নামে দুটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার স্বপক্ষে তিনি আন্দোলন গড়ে তোলেন।‌ শুধু তাই নয়, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত,  কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য, দেশীয় পণ্যের ওপর অধিক পরিমাণে শুল্ক আরওপ, মজুরি আইন, বিচার বিভাগীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ইংরেজ শাসনের সময়েও তিনি ইংরেজ রাজকর্মচারীদের অসদাচরণের প্রতিবাদ জানাতে কখনও দ্বিধা করেননি। 


রাজা রামমোহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান ও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার সমর্থক। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড আর্মহার্স্টকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি এ দেশে গণিত, প্রকৃতিবিজ্ঞান, রসায়ন ও পাশ্চাত্য দর্শন শেখানোর দাবি জানান। জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন (স্কটিশ চার্চ কলেজ) হেয়ার স্কুল-সহ বেশকিছু ইংরেজিমাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠায় তাঁর পরোক্ষ সহযোগিতা ছিল। বেদান্ত কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞান। 


রাজা রামমোহন রায়ের মূল্যায়ন করতে গিয়ে কোনও কোনও ঐতিহাসিক তাঁর সীমাবদ্ধতার উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্ব-বিরোধিতার অভিযোগ এনেছেন। তাদের সেই মূল্যায়ন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক নয়, তবে সেসবের খুব সামান্যই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। 


 রাজা রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ব্রাহ্মসমাজ। নারীর শিক্ষা ও স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ রদ, অসবর্ণ বিবাহ প্রচলনের আন্দোলনের পথ প্রদর্শক ছিলেন তিনি। এদেশে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ও ইংরেজি শিক্ষার সূচনা তারই ঐকান্তিক উদ্যোগের ফল।

  “Rammohan Roy inaugurated the modern age in India” রবীন্দ্রনাথের উক্তিটি যথার্থ। 


নাস্তিক বনাম নাস্তিক -
রাজু দত্ত
May 20, 2025 | যুক্তি | views:3 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ভজহরিবাবু নাস্তিক। তিনি দৈনন্দিন জীবনযাপনে কোনওপ্রকার প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় নিয়মকানুন মেনে চলেন না। কোনও উপাসনালয় যান না। ভূত-প্রেত-জ্যোতিষসহ সকল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তার অকাট্য যুক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হন এইসকল বিশ্বাসীরা‌। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ‘শ্রাদ্ধ’ জাতীয় অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়াননি। এমনকি চৌদ্দ দিনের ‘অশৌচ বিধি’ও তিনি মানেননি। 


তাঁর পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত সকলেই জানেন যে ভজহরিবাবু ঘোর নাস্তিক। তবে তাঁরা কখনও তাঁকে এবিষয় কোনওরকম ব্যক্তি আক্রমণ করেন না। কারণ ভজহরি বাবু বিপদে আপদে সবসময় সবার আগে শত্রু-মিত্র সবার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “আমি মানবতায় বিশ্বাসী। মানবতাই আমার ধর্ম।”  তিনি  জোর জবরদস্তি কারো বিশ্বাসে আঘাত হানেন না। স্পষ্ট বলেন “আমার যুক্তি তুমি যুক্তি দিয়ে খন্ডন করে দেখাও, তাহলে আমি তোমার কথা মেনে নেবো।”। তারা জানেন ভজহরিবাবুর সাথে যুক্তি-তর্কে পেরে ওঠা অসম্ভব, তাই তাঁর সাথে তর্কে জড়ান না। তারা বলেন, “নাস্তিক বটে, তবে ভজহরিবাবুর মত মানুষ আজকের দিনে বিরল বৈকি।” এহেন ভজহরিবাবুর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল, তারই কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ‘নাস্তিক’ বন্ধু বান্ধবের সৌজন্যে। 


এই জনৈক নাস্তিকের ফেসবুকে একটি সাম্প্রতিক আলোকচিত্র (ফটো) পোস্ট করার পর যত গোলমালের সূত্রপাত। ছবিতে দেখা যাচ্ছে সস্ত্রীক একটি মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেই মন্দিরের পুরোহিতের সাথে তিনি কথা বলছেন। আসলে তিনি একটি জরুরী কাজে গিয়েছিলেন, ফেরার পথে জনৈক পরিচিত, যিনি পেশায় পুরোহিত তার সাথে কথা বলছিলেন। ব্যস্! একজন নাস্তিকের এহেন আচরণ মেনে নিতে পারলো না ‘নাস্তিক সমাজ’ এর অনেকেই। তারা ভজহরিবাবুর ছবিটির উৎস, কার্যকারণ কিছুই বিচার-বিবেচনা না করে ছবিটি ব্যাপক হারে শেয়ার করতে লাগলেন। 


ছবির সাথে যে ক্যাপসনগুলি তারা লিখলেন তা দেখে অবাক হয়ে গেলেন ভজহরিবাবু। একজন লিখেছেন, ‘সস্ত্রীক পুজো দিয়ে ফিরছেন নাস্তিক ভজহরি।” একজন লিখেছেন, ‘নাস্তিকও মন্দিরে যায়, দেক্লে হবে খচ্চা আচে।” একজন বিনম্র নাস্তিক যিনি বিভিন্ন সময়েই সামাজিক- রাজনৈতিক আন্দোলনে তীব্র ফেসবুকীয় প্রতিবাদে সামিল হোন, তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে লিখেছেন, “এইসব ভন্ড নাস্তিকদের জন্য প্রকৃত নাস্তিকদের বদনাম হয়। এদের বয়কট করুন।” সরস ভঙ্গিতে একজন লিখেছেন, “ধর্মেও আছে, জিরাফেও আছে।”


উক্ত পোস্টগুলির কমেন্টবক্সে কমেন্টগুলিতে ভজহরিবাবুর প্রতি তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিদ্রুপ উপচে পড়ছে। কমেন্ট, পাল্টা কমেন্টের স্ক্রিনশট ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে। নাস্তিক-আস্তিক একযোগে আক্রমণ করেছে ভজহরিবাবুকে। ব্যতিক্রম বলতে মুষ্টিমেয় কয়েকজন নাস্তিক। যাঁরা ভজহরিবাবুর পক্ষে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করছেন। তাদের সেই মন্তব্যের আবার স্ক্রিনশটও পোস্ট করছেন অন্য নাস্তিকরা। এইসব ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপই কেন্দ্রবিন্দু এখন।


ভজহরিবাবুর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল।‌ পথে-ঘাটে, বাড়িতে, অফিসে সর্বত্র তাকে কটূক্তি-অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। আজ সকালে পাড়ার এক নাস্তিক বন্ধু তাকে ‘নাসসস্ তিকক্’ বলে বিদ্রুপ করেছেন। উপস্থিত সবাই হো-হো করে হেসে উঠেছে। নাস্তিক ভদ্রলোক বললেন, ‘নাস্তিক হওয়া অত সহজ নয় বুঝলি হরি, অনেক পড়াশোনা করতে হয়”। ভজহরিবাবুর বিরুদ্ধাচরণ করার একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে যেন। নেতৃত্বে রয়েছেন তাঁরই কয়েকজন নাস্তিক বন্ধু-বান্ধব। 


গভীর অস্ফুট যন্ত্রণার আবেগ আর মানসিক অবসাদে তাঁর যুক্তিবোধ ঢেকে গেল। তিনি এই দুর্দিনে কাউকেই পাশে পেলেন না। দু-একজন বন্ধুর (নাস্তিক) পরোক্ষ সান্ত্বনাতেও মানসিক অবসাদের কণামাত্র দূর হল না । বৃদ্ধ ভজহরিবাবু চরম সিদ্ধান্ত নিলেন। সকলের অলক্ষ্যে তীব্র বিষাক্ত কীটনাশক পান করলেন। তারপর...


না, মৃত্যু হয়নি ভজহরিবাবুর। তাঁর স্ত্রী, যিনি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে প্রবল আস্থাশীল এবং পাড়া প্রতিবেশীরা যারা সকলেই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী এদের তৎপরতা এবং মুষ্টিমেয় কয়েজন বন্ধুর (নাস্তিক) ঐকান্তিক সহযোগিতা ও সর্বোপরি ডক্টর সৈফুদ্দিন (নাস্তিক)-এর সুচিকিৎসায় তিনি বেঁচে গেলেন।‌ তার এই কঠিন সময় মিশে গেলো আস্তিক-নাস্তিক সকলে। জয় হল মানবতার। 


ভজহরিবাবুর গল্পটা কাল্পনিক।‌ তবে সাম্প্রতিক সময় নাস্তিকদের এই রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সবাই হয়ত আত্মঘাতী হবার মতো চরম সিদ্ধান্ত নেন না, কিন্তু একদল নাস্তিকের এইরকম আচরণে আর একদল নাস্তিককে চরম মূল্য দিতে হয়। নাস্তিক বনাম নাস্তিক লড়াইটা চলতেই থাকে।


দৈনন্দিন জীবনে আমরা যাদের সাথে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কে জড়িয়ে তারা অধিকাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, জ্যোতিষ, ভূত-প্রেতসহ বিবিধ কুসংস্কারে বিশ্বাসী। আমরা যে মুদি দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে থাকি ও রাত্রে  পরিবারের যে সদস্যদের সাথে ঘুমোতে যাই, তাদের অধিকাংশই আস্তিক। তাদের সকলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলে নাস্তিকদের নিজস্ব একটা পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে রাতারাতি। 


আমাদের পৃথিবীতে এখনও আস্তিকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী থেকে সাহিত্যিক, অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী, চিত্রশিল্পীসহ সকল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের অধিকাংশ আস্তিক। যে স্কুলে বা কলেজে আমরা পড়াশোনা করি, যে কর্মস্থল আমাদের উপার্জনের সম্বল, সেখানে আমাদের সহপাঠী ও সহকর্মীরা অধিকাংশই আস্তিক। ট্রেনে, বাসে, বিমানে, জাহাজে আমাদের সহযাত্রীদের অধিকাংশই আস্তিক। যে কৃষক ফসল ফলান, যে শ্রমিক পণ্য উৎপাদন করেন, আমাদের বাড়ি থেকে  রাস্তাঘাট সমস্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন, যে সকল বিক্রেতাদের দোকান থেকে আমরা পণ্য ক্রয় করি, যে চালক আমাদের গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেন, যে পরিচারিকা আমাদের গৃহকার্যে সহায়তা করেন, যে সকল মানুষ আমাদের অব্যবহার্য বর্জ্য পরিষ্কার করে পরিবেশ পরিষ্কার রাখেন, যে সেবিকা আমাদের অসুস্থতার সময় শুশ্রুষা করেন, তাদের অধিকাংশই আস্তিক। এদের সকলকে এড়িয়ে আমরা বাঁচতে পারবো কি?

মনে রাখবেন, নাস্তিকদের নিজস্ব পৃথিবী এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিপুল সংখ্যক আস্তিকদের ভিড়েই তাদের থাকতে হয়। পৃথিবীর বাইরে গিয়ে তো থাকা সম্ভব নয়। কাজেই, সকলের কাছে আমার বিনীত আবেদন, একটি ছবি ভিডিও বা স্ক্রিনশট দেখিয়ে কোনও একজন নাস্তিককে রাতারাতি ভন্ড প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না। তার উৎস, কার্যকারণ সম্পর্ক বিবেচনা করে যদি প্রমাণিত হয় তিনি ভন্ড তবে এর দায় কেবল তাঁর। সকল নাস্তিকদের  ঘাড়ে দ্বিচারিতার দায় চাপিয়ে তাঁদের আদর্শকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার চেষ্টাও অনুচিত। মনে রাখবেন আগামী দিনগুলি কেবল মানবতার। সেখানে থাকবে না কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অস্তিত্ব। মানুষ বাঁচবে ‘মানুষ’ হয়ে।


গাছেদের কথা -
রাজু দত্ত
May 19, 2025 | সচেতনতা | views:12 | likes:0 | share: 0 | comments:0

সেই তেঁতুল গাছটার কথা মনে হলে আমি এখনও প্রিয়জন হারানোর শোক অনুভব করি। ছেলেবেলায় সেই গাছটা ছিল আমাদের একান্ত আপন। 

গাছের নীচে সুশীতল ছায়ায় আমরা বেঁধেছিলাম একটা মাচা। এই মাচাটাই ছিল আমাদের ছেলেবেলার প্রখর গরমের দিনে একমাত্র আশ্রয়। আমরা সেই মাচায় বসে কত আড্ডা দিতাম। Rank card খেলতাম, গল্প গুজব করতাম। কখনও বা মাচায় শুয়ে ঘুমাতাম অঘোরে। স্কুল ছুটি থাকলে তেঁতুল গাছের নীচে বাঁধা এই মাচাতেই আমরা দিনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করতাম। 


গাছটা মারা গেলো। তাকে মেরে ফেলা হলো নির্মমভাবে। মালিকের আরও বাড়ি বানানোর প্রয়োজনে মেরে ফেলা হলো আমাদের প্রিয় তেঁতুল গাছটাকে। তেঁতুল গাছটার কত প্রতিবেশী ছিল। একে একে নিহত হলো অনেকেই। নিহত সেই গাছের স্থান দখল করলো ছোটো বড়ো রঙীন সুসজ্জিত বাড়ি ও অট্টালিকারা। পাকা ও চওড়া হলো রাস্তাঘাট। তৈরি হলো কত অফিস, স্কুল কলেজ, সেতু, সুইমিং পুল,,,,,। 


একসময় এ তল্লাট জুড়ে ছিল দিগন্তবিস্তৃত ক্ষেত। ক্ষেতজুড়ে মহানন্দে নৃত্য করত ধান আর মরশুমি সবজির গাছেরা। ছিল আরও কত গাছ। বট, বাবলা, ক্ষিরিশ, তাল, গাছেদের নামে এখানে কত পাড়ার নাম জানো। 


তখন আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলনা। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের দিনে, আমরা বসতাম গিয়ে  গাছেদের কাছে। তারা প্রখর রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকতো হাসিমুখে। ডাকতো আমাদের। বলত, কৈ রে গরমে কষ্ট পাস বুঝি! আয় আয় একটু বোস দিকিনি আমাদের কাছে। আয়.....”।


 জল পিপাসা পেত ওদেরও। ওরা ইশারায় বলত সে কথা। আমরা  বালতি করে জল ভরে নিয়ে ভিজিয়ে দিতাম ওদের শিকড়। ওরা আনন্দে নেচে উঠতো। ডালপালা নেড়ে ওদের সে কি নাচ্। আমরা ওদের নাচ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়তাম। 


শুধু কি দিনের বেলা? রাতেও ছুটে যেতাম আমরা আমাদের গাছেদের সাথে দেখা করতে। ওদের পাশে বসে আমরা কত গল্প করতাম, গান গাইতাম, দুষ্টুমি করতাম। মাঝেমাঝে আরামে ঘুমিয়ে পড়তাম। বাড়ির বড়োরা এসে ডেকে নিয়ে যেতো। কেউ বলত “হ্যাঁ রে তোদের ঘরবাড়ি নেই? গাছতলায় শুয়ে আছিস!” আমরা হাসতাম। 


আমরা ঢিল ছুঁড়ে যখন গাছেদের ডাল থেকে ফল পেড়ে খেতাম, গাছেদের আঘাত লাগতো, ওরা কোনও প্রতিবাদ করত না। ওরা নীরবে সহ্য করত সে আঘাতের যন্ত্রণা। প্রতিবাদ করত মালিক। গাছেদের মালিক বকা দিত আমাদের। আমরা ফল খেতাম খিদে মেটাতে। আর সেই মালিকেরা  অট্টালিকা বানানোর জন্য, উন্নত শহর বানানোর জন্য কি নির্মমভাবে হত্যা করলো গাছগুলোকে। আমরা প্রতিবাদ করিনি। 


গাছেরা যাবার সময় বলে যেতো, “তোরা তো আমাদের বন্ধু, আমাদের ওরা এভাবে মেরে ফেলছে, তোরা নীরবে দেখে গেলি! কিছু বললি না! বাধা দিলি না! আমরা বলতাম, “আমরা তো মালিক নই।” গাছেরা বলত, “বাহ্ রে স্বার্থপরের দল! আমাদের কাছে এসে যখন শীতল ছায়ায় ঘুমিয়ে থাকতিস, যখন আমাদের ডাল পালায় আঘাতের পর আঘাত করে ফল পেড়ে খেতিস, তখন তো আমি বলিনি, “যা যা আমি মালিককে ফল দেবো, ছায়া দেবো, তোরা দূর হ। বুঝবি যেদিন থাকবোনা, সেদিন বুঝবি তোরা‌।”


বলতে বলতেই তাদের ওপর নেমে আসতো তীক্ষ্ণ কুঠারাঘাত। যন্ত্রণায় অস্ফুটে চিৎকার করত গাছগুলো। আমরা তখন উন্নত শহরের জন্ম দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। ঝা চকচকে একটা শহর। যেখানে থাকবে বিশাল বিশাল রঙীন অট্টালিকা, চওড়া রাস্তাঘাট, সেতু, সুইমিং পুল, দোকানপাট, অফিস, আদালত, স্কুল কলেজ,,,,,। হুস্ হুস করে সারাদিন ছুটে যাবে অজস্র গাড়ি। উফফ কি অসম্ভব সুখ পেতাম আমরা এটা ভেবেই। যেন স্বপ্ন মনে হতো। রঙীন স্বপ্ন!


আজ আমাদের গ্রামগুলি বদলে গেছে শহরে। আমাদের স্বপ্নের শহর। আমরা কত আধুনিক হয়েছি। এখনও গাছেরা আছে। তবে অধিকাংশ ফুলের গাছ। ফ্ল্যাটের জানালায়, বাড়ির ছাদে তাদের দেখা যায় এখন। বৃক্ষদের ভিড় তেমন আর চোখে পড়েনা আগের মতো। তাও সেইসব বৃক্ষরাজির কাছে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সর্বত্র। কোথাও সেই নির্দেশ কোনও ব্যক্তির, কোথাও বা সরকারের।‌ যে যেখানে মালিক আর কি!  


কিন্তু কোথায় যেন একটা কষ্ট হচ্ছে। কিসের কষ্ট এটা? এ কি! আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে কেন! অক্সিজেন কি কমে গেলো নাকি পৃথিবীতে? এত গরম লাগছে কেন আমার? কি অসহ্য উষ্ণ বাতাস আমার চোখেমুখে অবিরাম আঘাত করে চলেছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কেন এমন হচ্ছে? 


আমায় একটু ছায়া দাও, একটু শীতল বাতাস করো আমায়। কেউ শুনতে পাচ্ছো? কেউ নেই! সবাই গেলো কোথায়! কৈ কেউ শুনতে পাচ্ছো? হ্যালো হ্যালো,,,,আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। এসি টা চালাও,,,,, অক্সিজেন সিলিন্ডারটা একটু,,,,, হ্যালো,,,,কেউ আছো.....হ্যালো....

প্রসঙ্গ: প্রবীর ঘোষ -
রাজু দত্ত
May 19, 2025 | জীবনী | views:3 | likes:0 | share: 0 | comments:0

কৈশোরে মিতালি পিসির সৌজন্যে তাঁর সাথে আমার আলাপ। মাধ্যম ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ গ্রন্থের প্রথম খন্ড। এরপর এই বইটির বাকি চারটি খন্ড ও  ‘আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’ বইগুলি পড়ে ফেলি। বয়সজনিত মানসিক সক্ষমতা দিয়ে এই বইগুলির মর্মবস্তু সাধ্যমতো উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি। এই বইগুলি আমার কিশোরমনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। সাহিত্য ও ইতিহাস পছন্দের বিষয় ছিল এতদিন, এরপর বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ জন্মালো। আমার মানসিকতার ক্রম পরিবর্তন ঘটতে লাগলো। 


এ কথা সত্য যে কোনও এক বা একাধিক বই পড়ে রাতারাতি নিজেকে বদলানো যায় না, তবে বইটির বিষয়বস্তু উপলব্ধি করে, তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তার যথার্থতা অর্জন করা যায়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিজেকে মানসিকভাবে বদলাতে আমার সময় লেগেছে অনেকটাই। তবে বইগুলি আমার কিশোর মনে জাগ্রত অজস্র প্রশ্নের জবাব দিয়েছিল। এ কথা আমি অস্বীকার করি না। 


অন্যতম প্রিয় লেখক প্রবীর ঘোষ, যিনি আমার চেতনায় বিজ্ঞানমনস্কতার বীজ বপণ করেছিলেন, তাঁর সাথে আমার মাত্র দু’বার সাক্ষাৎ হয়েছে। প্রথমবার তাঁর অসুস্থতার সময়, শেষবার তাঁর মৃত্যুর সময়। এ বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা চলাকালীন গত 5ই ফেব্রুয়ারি সকালে আমি ও অরিন্দম তাঁর দমদমের বাসগৃহে তাঁকে দেখতে যাই। গতকাল 7 ই এপ্রিল, তাঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে, দুপুরে অরিন্দমের সাথেই যাই তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে। উভয় সাক্ষাৎ বড়ো যন্ত্রণার। প্রথমবার গিয়ে দেখলাম, তিনি রোগশয্যায়, শেষবার মৃত্যুশয্যায়। জ্যোতিষীসহ সকল অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের ত্রাস, সমকালীন সময়ে যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ লড়াকু প্রবীর ঘোষকে এভাবে দেখবো, কখনও ভাবিনি। কথাবার্তাও বিশেষ বলতে পারিনি। তাই একটা অস্ফুট আফসোস রয়েই গেলো। 


মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভাষায়, “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে”। মৃত্যু জীবনের শেষে এক সুনিশ্চিত ঘটনা। কেবল জীবের নয়, মহাবিশ্বের সকল গ্রহ উপগ্রহ নক্ষত্রের মৃত্যু আছে। সৃষ্টি, স্থিতি প্রলয়ের চক্র মহাবিশ্বে নিরন্তর আবর্তিত। আমরা কেউই তার উর্ধ্বে নই। আমাদের বেঁচে থাকা আমাদের ‘কাজ’ এর মধ্যে। আমাদের বেঁচে থাকা মৃত্যুর পর আমাদের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে পারার অন্তত একজন মানুষ রেখে যাওয়ার মধ্যে। আমাদের বেঁচে থাকা আমাদের গৃহীত আদর্শের মধ্যে। মৃত্যুর পরেও প্রবীর ঘোষ এভাবেই বেঁচে থাকবেন আমাদের মধ্যে।‌ 


পাঁচটি খন্ডে প্রকাশিত ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ ছাড়াও তিনি আরও যে সকল গ্রন্থ রচনা করেছেন সেগুলি হলো, যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা, আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না, সংস্কৃতি: সংঘর্ষ ও নির্মাণ, অলৌকিক রহস্য সন্ধানে পিংকি, যুক্তিবাদের চোখে নারীমুক্তি, অলৌকিক রহস্যজালে পিংকি, পিনাকী ও অলৌকিক বাবা রহস্য সমগ্র, জ্যোতিষীর কফিনে শেষ পেরেক, মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ মেডিটেশন, প্রেম, বিবাহ ও অন্যান্য, সম্মোহনের A to Z, গোল টেবিলে সাফ জবাব, রাজনীতির ম্যানেজমেন্ট এবং আরও কিছু, মেমারিম্যান থেকে মোবাইল বাবা,প্রসঙ্গ সন্ত্রাস এবং, যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ, আমার ছেলেবেলা, স্বাধীনতার পরে, ভারতের জ্বলন্ত সমস্যা, প্রবাদ-সংস্কার-কুসংস্কার-প্রবাদ-সংস্কার-কুসংস্কার, গেরিলা যুদ্ধের A to Z থেকে আজাদি, ধর্ম, সেবা - সম্মোহন, পিংকি ও অলৌকিক বাবা, অপরাধ বিজ্ঞান, স্বয়ম্ভর গ্রাম, বারে বারে ঘুরে ফিরে তুমি, যুক্তিবাদের চোখে গীতা, রামায়ন মহাভারত ইত্যাদি, কাশ্মীরে আজাদির লড়াই- একটি ঐতিহাসিক দলিল, অলৌকিক দৃষ্টি রহস্য, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস, সেরা যুক্তিবাদী সংকলন, দুই বাংলার যুক্তিবাদীদের চোখে ধর্ম, আজকের যুক্তিবাদ কি ও কেন,জ্যোতিষ বনাম বিজ্ঞান, ভগবানে ভর ভূতে ভর, জ্যোতিষ একটি অবিজ্ঞান, যুক্তিবাদীর চোখে ধর্ম, ভূতে ভর এবং যুক্তিবাদীদের কথা।    


সমকালীন সময়ে যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ, জ্যোতিষী সহ সকল অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের ত্রাস, প্রবীর ঘোষ বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মধ্যে। তাঁর পথ অনুসরণ করে আগামী দিনে এগিয়ে যাবে যুক্তিবাদী আন্দোলন। প্রবীর ঘোষ ‘আলোর পথযাত্রী’ দের আলোর দিশারী হয়ে থেকে যাবেন আগামীদিনে।

প্রসঙ্গ: ধর্ম -
রাজু দত্ত
Dec. 3, 2024 | ধর্ম | views:284 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ধর্ম কথাটার মানে হল ধারন করা। যে যা স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য ধারন করে সেটাই তার ধর্ম। যেমন জলের একটি ধর্ম, আধারের আকার ধারন। 

মানুষের ধর্ম তাই-ই যা মানুষ‌ ধারন করে থাকে। এক্ষেত্রে ঔচিত্যবোধের প্রশ্নটি জড়িত। আপনি যে স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য ধারন‌ করে আছেন, সেটাই আপনার ধর্ম।‌ 


মানুষের শারীরিক গঠন তার ধর্ম। যেমন তার মস্তিস্ক, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, গায়ের রঙ ইত্যাদি।‌ আবার তার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যও তার ধর্ম।‌ এই স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের সাথে ঔচিত্যবোধের প্রশ্নটি জড়িত। যেমন চুরি করা চোরের ধর্ম, কিন্তু তা উচিৎ নয়। তাই এই ধর্ম গ্রহনযোগ্য নয়। আবার বিপদে আপদে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এটা গ্রহণযোগ্য। 

অর্থাৎ যে শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষ ধারন‌ করে থাকে সেগুলিই তার ধর্ম। মানুষের মানসিক বৈশিষ্ট্য, যা তার ও অন্যন্য জীবের পক্ষে মঙ্গলজনক তাকেই মানবধর্ম বলা যায়। 

মানুষের সততা, ভালবাসা, মুল্যবোধ, জ্ঞানপিপাপা ইত্যাদি হল তার ধর্ম। এটাই মানবধর্ম। মানুষ হিংস্র জন্তকেও রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরত, এটা মানবধর্ম। অপরদিকে মানুষের প্রতি মানুষের‌ ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা ইত্যাদি মানবধর্ম নয়। আপনি যে ধর্মাবলম্বীই হোন না কেন, আপনি মানুষ।‌ তাই মানবধর্ম আপনাকে মেনে চলতেই হবে। আপনি চান‌  বা না চান। মানবধর্ম বিরোধী হলে আপনি দয়া মায়া, সততা,  প্রেম সহ সকল সদ আচরণ এর বিরোধী।‌ কারণ এগুলোই মানুষের ধর্ম। মানুষের ধর্মই মানবধর্ম। 

কোনো মানুষ যদি মানবধর্মে বিশ্বাসের কথা বলে অসদাচরণ করে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তার অসদাচরণ দেখে মানবধর্ম ভ্রান্ত  হয়ে যায় না। তাই আপনার বিচারবুদ্ধি দিয়ে ভেবে দেখুন, মানুষের কী করা উচিৎ। তাই করুন। এটাই আপনার কর্তব্য।‌ 

জাতি ও  বর্ণগত বিদ্বেষ, অর্থনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, হিংসা, কলহ, অসততা, দ্বিচারিতা, স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা সহ সকল অসদাচরণ  মানবধর্ম বিরোধী।‌ এগুলি পরিত্যাগ করুন। এগুলি মানুষের ধর্ম নয়।‌ 

হুজুগে বিনোদন -
রাজু দত্ত
Nov. 26, 2024 | সচেতনতা | views:681 | likes:0 | share: 0 | comments:0

হুজুগ হলো সেই আচরণ যা সাময়িকভাবে কোনও এক বা একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে, যা পারিপার্শ্বিক পরিবেশে দ্রুত সঞ্চারিত হয়। হুজুগ সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় হতে পারে। এই রচনায় আমি শুধুমাত্র বিনোদনমূলক হুজুগেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব। 


এক বা একাধিক বিষয় কোনও একজন ব্যক্তির আগ্রহ থাকে, যা তাকে আনন্দ প্রদান করে, সাধারণভাবে আমরা তাকেই বিনোদন বলে থাকি। বিনোদন শব্দটিকেই ইংরেজিতে এন্টারটেইনমেন্ট বলা হয়, যে শব্দটির সাথে আমরা সকলেই সুপরিচিত। 


বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। যেমন, বই বা সংবাদপত্র পড়া, গান শোনা, টিভি দেখা, সিনেমা দেখা, আড্ডা মারা ইত্যাদি। বর্তমানে অন্তর্জালীয় বিশ্বে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, সহ বিনোদনের হাজারো বিকল্প মাধ্যম বিনোদনের দুনিয়াকে আরো সম্প্রসারিত করেছে। 

 

যখন প্রথম দূরদর্শনের প্রসার ঘটলো, তখন বিনোদনের এই মাধ্যমটির প্রতি আমাদের অমোঘ আকর্ষণ ছিল। বর্তমানে স্মার্টফোনের প্রতি আমাদের আকর্ষণ মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে। আগামীদিনে এই মাধ্যমটির প্রতি আকর্ষণ থাকবে না। তার স্থান দখল করবে অন্য কোনও মাধ্যম। অর্থাৎ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিনোদনমূলক মাধ্যমের পরিবর্তন ঘটে। 


সাম্প্রতিক সময় কিছু সাময়িক বিনোদন আমাদের কিছু সময়ের জন্য এতটাই আচ্ছন্ন করে রাখছে, যে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, পারিপার্শ্বিক পরিবেশে সংঘটিত ঘটনাবলী, উদ্ভুত সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সকল সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় এই সকল বিষয়কে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন করে দিয়ে, মেতে উঠছি সেই সকল সাময়িক হুজুগে বিনোদনে। অতি সম্প্রতি এইরকম একটি হুজুগে মেতে উঠেছিলাম আমরা। 'কাঁচা বাদাম' হুজুগ। যা এই বিষয় একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 


উল্লেখ্য হুজুগগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও একটি সঙ্গীতকে কেন্দ্র করে হয় থাকে। টুনির মা, কোলাভেরিডির হুজুগ পেরিয়ে আমরা চলে এলাম টুম্পা সোনা হুজুগে। তারপর, ম্যানিকে মাগে হিতে, কমলা নৃত্য করে এর হুজুগ পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম কাঁচা বাদাম হুজুগে। তারপর এলো পুষ্পা, শ্রীবল্লি। এইভাবে আসতেই থাকছে হুজুগে গানের সম্ভার। গান শুনুন, একবার নয় ভালো লাগলে দশবার শুনুন ক্ষতি নেই, ক্ষতিটা নিজেদের বিপুল সময় এইসকল গানের পেছনে অপব্যয় করাটা। 


শুধু গান নয়, আমরা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি দেখে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়ে উঠছি, যে সেইসকল ঘটনাবলীকেই মূল আলোচ্য বিষয় করে নেওয়াকেই কর্তব্য মনে করতে শুরু করেছি। কোনও রাজনৈতিক নেতা বা সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টজনেদের প্রতিটি আচরণ তো বটেই যে কোনও তুচ্ছ ঘটনাকেও অত্যধিক গুরুত্ব দিতে একেবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা। আমি নিজেও তার ব্যতিক্রম নই। কখনো কখনো আমিও এই সকল হুজুগের স্রোতে গা ভাসাই। 


প্রশ্ন হলো, কেন এই সকল হুজুগের উৎপত্তি? কেনই বা খুব সহজেই স্বেচ্ছায় এইসকল হুজুগে মেতে উঠছি। এর মুখ্য কারণ, সমাজের পরিচালকরা এইসকল হুজুগে মাতিয়ে রেখে সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কথা ভুলিয়ে রাখতে চায়। যাতে করে আমরা এই সকল সমস্যা সমাধানে কোনওপ্রকার উদ্যোগ গ্রহণ না করতে পারি। সকল প্রকার বৈষম্য, কুসংস্কার, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, নারী নির্যাতন, দূর্নীতি ও অন্যয়ের বিরুদ্ধে আমরা যাতে লড়াই না করতে পারি, আমরা যাতে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলে দূর করতে পারি সকল প্রকার অসাম্য। সমাজপতিরা তাই চায়। তাতে তাদের স্বার্থসিদ্ধির প্রশ্নটি জড়িত যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ শোষিত মানুষের স্বার্থ আর সংখ্যালঘু শোষক শ্রেণীর স্বার্থ এক হতে পারে না। একথা তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না। 


কাজেই আমরা যদি জাতপাতহীন, বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কুসংস্কারমুক্ত, সমাজ গড়ে তুলতে চাই, তবে এই সকল হুজুগে বিনোদনে অংশগ্রহণ করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। তা না হলে আমরা গড়তে পারবো না, আমাদের কাঙ্খিত সেই নতুন সমাজ। আমরা লড়তে পারবো না, সেই কাঙ্খিত সমাজ গঠনের অত্যন্ত কঠিন লড়াইটা। কারণ আমরা লড়বো উন্নত চেতনা দিয়ে, অযৌক্তিক, অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক হুজুগে বিনোদন আমাদের মনে সেই চেতনার জাগরণ ঘটাতে পারবে না। কাজেই হুজুগে বিনোদন থেকে দূরে থাকুন, দূরে রাখুন সকলকে। 

প্রসঙ্গ: প্রেম -
রাজু দত্ত
Nov. 26, 2024 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:285 | likes:0 | share: 0 | comments:0

প্রেম হল একটা অনুভূতি, যা দুটি মানুষের পরস্পরের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থেকে জন্মলাভ করে। এই আকর্ষণ হতে পারে শারীরিক বা চারিত্রিক। অর্থাৎ কেউ কারো শারীরিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়ে, কেউ প্রেমে পড়ে কারো চারিত্রিক গুনাবলীর মুগ্ধতায়। 'ভালো লাগা' জন্ম দেয় 'প্রেম' নামক অনুভূতির যা ক্রমশ ভালোবাসায় পরিণত হয়।


সংকীর্ণ অর্থে আমরা 'প্রেম' বলতে বুঝি 'নারী ও পুরুষের এমন এক পারস্পরিক সম্পর্ক যাতে মিশে থাকে যৌনতা'। নারী পুরুষ উভয়ের যৌন আকাঙ্খা চরিতার্থ করতে উভয়ই শারীরিকভাবে মিলিত হয় 'যৌন সঙ্গম' ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ব্যাপক অর্থে 'প্রেম' হল সেই অনুভূতি যা থাকে সকল মানুষের প্রতি সকল জীবের প্রতি।‌ যাতে থাকে না কোনও‌ যৌনতার প্রশ্ন। থাকে না কোনও সীমাবদ্ধতা। অর্থাৎ ব্যাপক অর্থে 'প্রেম' বিশ্বজনীন'। 


আমাদের দেশে নারী পুরুষের যৌন আকাঙ্খা চরিতার্থ করার সাথে 'বিবাহ' নামক প্রাতিষ্ঠানিক কার্যের প্রশ্নটি জড়িত। শারীরিক সম্পর্ক তো দূরের কথা, 'বিবাহের পূর্বে' নারী পুরুষের পারস্পরিক  'চুম্বন', 'আলিঙ্গন' এর মতো আচরণগুলিও 'সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ‌। অথচ প্রাকৃতিকভাবে নারী পুরুষ উভয়েরই যৌন মিলনের আকাঙ্খা থাকাটাই স্বাভাবিক। অথচ বিবাহ না করলে এই আকাঙ্খা পূরণ 'সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ। অথচ দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ, যারা 'প্রেম' এর সম্পর্কে সম্পর্কিত তাদের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে শারীরিকভাবে মিলিত হওয়া অনৈতিক বলে আমি মনে করি না। এটা আইনত 'অপরাধ' বলেও আমার জানা নেই। তবুও রক্ষণশীল সমাজ নারী পুরুষের যৌন মিলনের আচরণটিকে 'বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। আশ্চর্য! 


তাহলে 'বিবাহ' করে নিলেই তো হয়! সেখানেই তো সমস্যা। 'বিবাহ' করতে হলে আপনাকে হাজার একটা শর্ত পূরণ করতে হবে। এই যেমন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান, জাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এরকম হাজারো পরিচয় যদি সমাজসম্মত ও বিবাহে উদ্যোগী দুটি মানুষের উভয়ের পরিবারসম্মত হয়, তবেই আপনি বিবাহের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।


 মেয়েদের ক্ষেত্রে 'শারীরিক সৌন্দর্য্য' ও ছেলেদের ক্ষেত্রে 'চাকরিজীবি' হওয়া প্রায় বাধ্যতামূলক। তার ওপর তো উভয়ের পৈতৃক ও‌ নিজ অর্জিত সম্পত্তি থাকাও প্রয়োজন। মেয়ের বাবার তো প্রচুর টাকা পয়সা থাকা দরকার না হলে 'পণ' বাবদ খাট, বিছানা, ড্রেসিং টেবিল, টিভি, ফ্রিজ, আলমারী, বাইক ও মেয়ের জন্য সামান্য কয়েক ভরি গহনা কিনবেন কোথা থেকে? এগুলো না দিলে সমাজ যে মেনে নেবে না। মেনে নেবে না মেয়ে জামাই ও তার পরিবার উভয়ই। কাজেই…


এই বিবাহ তিনটি উপায় হয়ে থাকে। এক - নিজেদের পছন্দ মতো 'লাভ ম্যারেজ' এবং দুই- উভয়ের পরিবারের পছন্দমতো 'অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ' ও সর্বসম্মতিক্রমে 'লাভ অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ'।  শেষোক্ত উপায়টি প্রায় বিরল ঘটনাগুলির একটি। অপর দুটি পন্থার প্রথমটি প্রায় কারোরই 'পরিবারসম্মত' নয়। যদিও এটিই আমি সমর্থন করি। দ্বিতীয়টি আজকাল‌ প্রায় বিরল পন্থা হতে চলেছে।‌ বর্তমানে এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য 'অনলাইন ঘটক' রূপে বিভিন্ন অ্যাপের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন বেঙ্গলি ম্যাট্রিমনিয়া, শাদি ডট কম। 


আমার ক্ষুদ্র জীবনের অতি সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, উপরিউক্ত উপায়গুলির‌ মধ্যে বর্তমান প্রজন্মের পছন্দ প্রথম উপায়টি। যেহেতু এই উপায়টি সাধারণত সমাজ ও পরিবার সম্মত নয়, তাই বর্তমানে বাড়ির অমতে‌ (বাড়ি থেকে পালিয়ে) রক্ষণশীল সমাজপতিদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিবাহ করার ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় এই যে, এই সকল বিবাহিত ছেলেমেয়েরা অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নয়। নিজেদের শারীরিক ও মানসিকভাবে গড়ে না তুলে, নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে  প্রতিষ্ঠিত না হয়ে সন্তানাদি 'মানুষ' করার সুকঠিন সংগ্রামে ব্রতী হচ্ছে। যার ফলে গড়ে উঠছে এক যণ্ত্রসুলভ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যারা সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে লড়বার শক্তি অর্জন করতে পারছে না। 


আবার যে সকল ছেলেমেয়েরা পরিবার ও সমাজের অমতে লড়াই করে তাদের প্রেমকে পূর্ণতা দিতে, পারছে না বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে, তারা হয়ে যাচ্ছে 'ব্যর্থ প্রেমিক' 'ব্যর্থ প্রেমিকা'। নারী পুরুষের সম্পর্ক মানেই 'প্রেমের সম্পর্ক' এই ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হয়ে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে একাধিক 'প্রেমের সম্পর্কে'। তাদের এই সকল সম্পর্কের ভিত এতটাই দুর্বল যে একাধিক সম্পর্কে জড়ালেও কোনও সম্পর্কই পূর্ণতা লাভ করছে না। 'প্রেম' এর গভীরতা উপলব্ধি করতে না পেরেই তারা নিজেদের 'ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ প্রেমিকা' মনে করছে। এরপর তারা হয়ে উঠছে 'প্রতিহিংসাপরায়ণ। যার ফল সম্প্রতি আমরা দেখছি একের পর এক 'প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে প্রেমিকাকে খুন' এর মতো ভয়ানক ঘটনায়। সবকিছু 'চাইলেই পাওয়া যায় না, লড়াই করে অর্জন করতে হয় নিজ যোগ্যতায়'। এই শিক্ষা না থাকায় আজকের প্রজন্ম 'প্রত্যাখান' 'ব্যর্থতা' এগুলি মেনে নিতে পারছে না। কখনো হয়ে উঠছে 'আত্মঘাতী' কখনও বা 'ঘাতক'। উভয় ঘটনাই অত্যন্ত উদ্বেগজনক।‌ খুনের ঘটনাও আজকাল প্রতিরোধের চেষ্টা না করে মানুষ তার 'লাইভ ভিডিও ' রেকর্ড করছে। কী অসম্ভব বিকৃতমনস্কতার প্রসার ঘটছে, ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। 'লাইভ স্যুইসাইড' এর ঘটনাও আজকাল ঘটতে দেখা যায়।‌ মানসিক অবসাদ কোন্‌ পর্যায় পৌঁছলে এটা করা সম্ভব! 


শুধু তাই নয়। আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে 'পরকিয়া' সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা। 'মূলত শারীরিক সুখলাভের আশায় সন্তানের কথা না ভেবে বাবা মায়েরা লিপ্ত হচ্ছে অনৈতিক সম্পর্কে। যার গভীর প্রভাব পড়ছে শিশুকিশোরদের ওপর। এই ঘটনাগুলি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। 'অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্খা' পরকিয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার মূল কারণ হলেও অনেকসময়ই স্বেচ্ছাচারী, বেপরোয়া মানুষ 'লোভ' (অর্থনৈতিক ও শারীরিক) এর বশে এই ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।  


প্রেমহীনতার এক জটিল আবর্তে আমরা ক্রমশ আবদ্ধ‌ হয়ে পড়ছি। যা থেকে বেরোতে না পারলে, চরম সংকটের সম্মুখীন হবে মানব সভ্যতা। নেমে আসবে প্রেমহীনতার এক অপ্রতিরোধ্য মহামারি। 

শিশুমনে বিজ্ঞানমনস্কতা‌‌ -
রাজু দত্ত
Nov. 25, 2024 | সচেতনতা | views:282 | likes:0 | share: 0 | comments:0

মূলত তিনটি সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মানবসভ্যতার বিকাশে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের গুরুত্ব সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই বিপ্লবের মধ্য দিয়েই রেনেসাঁর উদ্ভব। মানবসভ্যতাকে সুস্থ স্বাভাবিক ও সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রয়োজনে, জনমানসে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার অত্যন্ত জরুরি।  শৈশবেই শিশুমনে বিজ্ঞানমনস্কতার বীজ বপণ করা আমাদের অবশ্যকর্তব্য। 


প্রথমেই বলে‌ রাখি, আমি মনোবিজ্ঞান বিষয় সম্পূর্ণ অজ্ঞ। দীর্ঘদিন শিশুদের সাথে থেকে, তাদের আচরণ বিশ্লেষণ করে আমি যা বুঝেছি, তার ভিত্তিতে তাদের মনে বিজ্ঞানমনস্কতার বীজ বপণের চেষ্টা করে গেছি। সব ক্ষেত্রে না হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যও পেয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমার সেই ব্যর্থতার দুটি কারণ উপলব্ধি করেছি। এক - আমার জ্ঞানের অস্বাভাবিক সীমাবদ্ধতা ও দুই - বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারে অভিভাবকদের তীব্র বিরোধীতা। 


শিশুরা অসম্ভব কৌতুহলী, আবেগপ্রবণ ও কল্পনাপ্রবণ হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা কম থাকায় ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা খুব সামান্য হওয়ায়, যে সকল ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করে, তার অধিকাংশ তাদের কাছে‌ দুর্বোধ্য থাকে। তারা বড়োদের কাছে সেই সকল বিষয় নানারকম প্রশ্ন করে থাকে। বড়োরা তাদের প্রশ্নের সাধ্যমতো উত্তর দিলেও, অধিকাংশ সময় তারা প্রশ্নগুলি এড়িয়ে যান। এতে শিশুর কৌতুহলের নিরসন তো হয়ই না, উপরন্তু, তাদের জিজ্ঞাসু মন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে, ফলে একসময় তারা প্রশ্ন করতে অনীহা প্রকাশ করে। এতে তার মানসিক বিকাশ প্রবলভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়।  


শিশুদের কৌতুহল নিরসন সবসময় সম্ভব হয়না। এর মূলত তিনটি কারণ। এক - প্রশ্নোল্লিখিত বিষয়  আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, দুই - বৈজ্ঞানিকগণ কর্তৃক এখনো সেই প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব হয়নি এবং তিন - অদ্ভুত, অবাস্তব বা হাস্যকর প্রশ্ন। 


প্রথমোক্ত সমস্যা দূর করতে আমাদের নিজেদের সচেষ্ট হতে হবে। বিভিন্ন বিষয় জ্ঞানলাভের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সহজতম পদ্ধতি হলো, বই পড়া। আমাদের প্রচুর বই পড়তে হবে ও পঠিত সকল বিষয় স্বচ্ছ ধারনা গড়ে তোলার প্রয়োজনে উক্ত বিষয়গুলি খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। বুঝতে না পারলে যিনি সেই বিষয় জানতে পারেন, তেমন কারও কাছে বিষয়টি বোঝার জন্য স্বচেষ্ট হতে হবে।  গুগল মাধ্যমেও আমরা বিকল্প উপায় বহু বিষয় জ্ঞানলাভ করতে পারি। তবে একটা কথা সর্বদা মনে রাখা দরকার, পঠিত সকল বিষয় যুক্তি দিয়ে যাচাই করা প্রয়োজন। বইতে যা লেখা আছে তা অভ্রান্ত সত্য নাও হতে পারে। দ্বিতীয় সমস্যা, শিশুর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নটির সঠিক উত্তর অতি সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকগণ কর্তৃক অজ্ঞাত থাকলে আপনি সেটা তাকে সরাসরি বলুন। বলুন যে এই বিষয় এখনো বৈজ্ঞানিকরা জানতে পারেননি। তবে জানার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। আপনি প্রশ্নটির সাথে সম্পর্কযুক্ত কোনো একটি প্রশ্ন তার মনে জাগিয়ে তুলুন, যার উত্তর বিজ্ঞান জানে।  শিশুর প্রশ্ন অদ্ভুত ও হাস্যকর হলে আপনিও আপনার রসবোধ ব্যবহার করে হাস্যকর উত্তর দিন। শিশুরা হাসতে ভালোবাসে। তবে একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, আপনি কখনোই শিশুর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন না। এতে শিশুর কৌতুহল বাধাপ্রাপ্ত হয়। যা একটি শিশুর মানসিক বিকাশের অন্তরায়। 


শিশুমনে বিজ্ঞানমনস্কতার বীজ বপণের কয়েকটি উপায় আমি উল্লেখ করছি। উল্লেখিত উপায়গুলি প্রয়োগ করে আমি বহুক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। আপনিও চেষ্টা করে দেখুন। 

(১) শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই কল্পনাপ্রবণ হয়। তাদের মনে কাল্পনিক প্রাণী, ডাইনি, জুজু, ভূতপ্রেত, ঈশ্বর জাতীয় অবাস্তব কল্পনার বীজ বপণ করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবেন না। বরং বিভিন্ন গাছপালা, জীবজন্তুর সাথে তাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটান। 


(২) কার্টুন যথাসম্ভব কম দেখান তাদের। বরং তাদের দেখার উপযুক্ত শিক্ষামূলক সিনেমা দেখান।    শিশুসাহিত্যিকদের রচনা পড়ান। তারা পড়ে মজা পাবে, তাদের পড়ার অভ্যাসটাও গড়ে উঠবে। 


(৩) সূক্ষ গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে দিন। 

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর সহজবোধ্য বিশ্লেষণ করে বোঝান। বিভিন্ন ছোটখাটো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা হাতে কলমে করে দেখান। 


(৪) মাঠে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন। এর ফলে অন্যান্য শিশুদের সাথে তার ভাবের আদানপ্রদান গড়ে উঠবে।‌ যা তার মানসিক বিকাশের সহায়ক হবে।‌ দাবা খেলান। দাবার চালে তার ভুলগুলি সহজবোধ্য করে বোঝান। শিশু বলে তাকে জিতিয়ে দেবেন না। 


(৫) শিশুর যুক্তি দিয়েই তার অযৌক্তিক ভাবনার অবসান ঘটান। এর ফলে সে একজন তার্কিক হয়ে উঠবে। যুক্তির পাল্টা যুক্তি দিতে শিখবে। কারণ সে সবসময় চাইবে তার যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে। আপনিও তা ভাঙার চেষ্টা করে যাবেন (তা যদি অযৌক্তিক হয়) এই দ্বন্দ্ব তাকে তার্কিক করে তুলবে। মনে রাখবেন যুক্তিবাদী হতে হলে তর্ক করতে শিখতে হবে। 

পরিশেষে বলি, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ঘটানো  কোনো তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া নয়। অসীম ধৈর্য্যের সাথে আপনাকে কাজটি করতে হবে। শিশুদের মনে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ঘটাতে অপেক্ষাকৃত অধিক ধৈর্য্য প্রয়োজন হয়। ওদের মন যে বড়োই চঞ্চল। তার নাগাল পাওয়া সহজ নাকি!

প্রসঙ্গ: আন্দোলন -
রাজু দত্ত
Nov. 25, 2024 | সমাজ | views:284 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ধরুন আপনি দোকানে গেছেন। দোকানদারকে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসটির মূল্য বাবদ কিছু টাকা দিয়ে বললেন, " আমাকে অমুক একটা দিন তো"। দোকানদার আপনার হাত থেকে টাকা নিয়ে আপনাকে আপনার প্রাপ্য জিনিসটি না দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তখন আপনি কী করবেন? 

 

আপনি প্রথমে তাকে বিষয়টি জানাবেন। তারপর ক্রমশ বাকবিতণ্ডা শুরু হবে, যা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়াতে পারে। শেষমেশ দোকানদার তার ভুল স্বীকার করে আপনার প্রাপ্য জিনিসটি আপনাকে দিল। 

 ঠিক সেইরকম, আপনি সরকারকে নিজের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাবদ, ক্রয়কৃত পণ্য বাবদ, পরিবহণ বাবদ, উপার্জন বাবদ ও আরো নানা বিবিধ উপায় কর প্রদান করছেন। তার বিনিময়  আপনি আপনার প্রাপ্য দাবি করবেন না? যখন আপনি তা পাচ্ছেন না। 

আপনার প্রাপ্য থেকে আপনাকে বঞ্চিত করা যেমন অন্যায়, ঠিক তেমনই সেই অন্যায় মুখবুজে মেনে নেওয়াও অন্যায়। সে অন্যায় যেই করুক, তার প্রতিবাদ করা আপনার অবশ্য কর্তব্য। অন্যায়ের সাথে আপোস করা কখনো উচিৎ নয়। এই আপোস না করার নামই আন্দোলন। 

 

আপনি আপনার পরিবারে অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করুন, আপনি আপনার কর্মস্থলে অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করুন। আপনি প্রতিবাদ করুন আপনার সাহিত্যে, আপনার অঙ্কিত চিত্রে - স্থাপত্যে- ভাস্কর্যে, চলচ্চিত্রে। আপনি প্রতিবাদ করুন আপনার সঙ্গীত- আবৃত্তি- অভিনয় সত্বার মধ্য দিয়ে। আপনি প্রতিবাদ করুন রাজনীতির ময়দানে।

 

অন্যায়ের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলন দমন করা ঘোরতর অন্যায়। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে হোক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হোক, আমাদের উচিৎ তার তীব্র প্রতিবাদ করা। মনে রাখবেন, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে অন্যায়ের সাথে আপোস করে, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আন্দোলন  গড়ে তোলা  সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গ: বিজ্ঞানমনস্কতা -
রাজু দত্ত
Nov. 23, 2024 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:810 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে আমি বুঝি, মনকে বিজ্ঞান নির্ভর করে তোলার প্রয়োজনে যুক্তিবাদী হয়ে ওঠা।

বিজ্ঞানমনস্ক হতে গেলে, তাকে‌ প্রথাগত শিক্ষায় বিজ্ঞানের কোনো একটি বা একাধিক শাখায় পান্ডিত্য থাকতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি তিনি যদি প্রথাগত শিক্ষায় বিশেষভাবে শিক্ষিত নাও হয়ে থাকেন, তাতেও তিনি বিজ্ঞানমনস্ক হবার ক্ষেত্রে অযোগ্য নন। বিজ্ঞানমনস্ক প্রথাগত শিক্ষা নির্ভর নয়। 

কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যোগে বিজ্ঞান শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অর্জিত শিক্ষা তিনি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেন, তবে তাকে বিজ্ঞানমনস্ক বলা যেতে পারে।

 অন্যদিকে, বিজ্ঞানের এক বা একাধিক শাখায় প্রথাগত শিক্ষার এক বা একাধিক ডিগ্রি অর্জন করা সত্ত্বেও কেউ যদি, তার অর্জিত শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করেন, তবে তাকে কখনোই বিজ্ঞানমনস্ক বলা যাবে না। কাজেই বিজ্ঞানমনস্ক হতে হলে, কোনো ব্যক্তিকে প্রথাগত শিক্ষায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী অথবা প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিষয় শিক্ষকতা করতেই হবে, এমন‌ কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। 


তাহলে কি বিজ্ঞানমনস্ক হবার ক্ষেত্রে প্রথাগত শিক্ষার কোনো‌ গুরুত্বই নেই? অবশ্যই আছে। তবে তা উল্লেখিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নির্ধারিত মুল্যয়নে নম্বর প্রাপ্তির উপর নির্ভর করে না। তা নির্ভর করে অর্জিত বিজ্ঞান শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগের উপর। প্রথাগত শিক্ষায় বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করলে, একজন ব্যক্তির বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার পথ সুগম হয়। অন্যদিকে নিজ উদ্যোগে বিজ্ঞান শিক্ষা গ্রহণকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিষয়টা অপেক্ষাকৃত কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। তাছাড়া প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত প্রত্যকে ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে নির্ধারিত বিজ্ঞান শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। তিনি সেইটুকু শিক্ষার ভিত্তিতে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠতে  পারেন। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান বিষয় উচ্চশিক্ষা লাভ না করেও। 


একজন ব্যক্তির বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের ভূমিকা অবশ্যই রয়েছে।

 এই সকল পরিবেশ কুসংস্কারাচ্ছন্ন হলে, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মবিশ্বাসী হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শৈশব থেকেই সেই সকল চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হন। তখন তার বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠা অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে। তার মানে এই নয় যে সেই ব্যক্তির পক্ষে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠা অসম্ভব। 


ভুলে গেলে চলবে না ইউরোপে রেনেসাঁ বা ভারতে নবজাগরণের পথিকৃৎ মহামানবেরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজেই বেড়ে উঠেছেন। সেই সমাজের মধ্যে থেকেই তাঁরা আমাদের প্রগতিশীলতার পথ দেখিয়েছেন। তাঁদের লড়াই আজকের তুলনায় সহস্রগুণ কঠিন ছিল। তবুও মানব কল্যানে তাঁরা আমৃত্যু আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁরাই তো আমাদের প্রেরণা। তাঁরা যদি তীব্র প্রতিকুলতার মধ্যে থেকেও লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন, তবে আজ এত অনুকুল পরিবেশে আমরা কেন নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার লড়াই, সমাজকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার লড়াইটা লড়তে পারবো না? 


আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষায় সুশিক্ষিত হতে হবে। বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে সেই শিক্ষা। ছড়িয়ে দিতে হবে আমাদের অর্জিত শিক্ষা অপরের মধ্যে। তবেই আমরা পারবো কুসংস্কার মুক্ত এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে। যেখানে মানুষ বাঁচবে 'মানুষ' হয়ে। 

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929